তাপমাত্রা কী? তাপমাত্রার বিভিন্ন একক।
জীবনে চলার পথে আমরা বিভিন্ন একক নিয়ে কথা বলি এবং মাথাও ঘামাই। কেন তা প্রয়োজন হয়! জীবনকে আরো সহজ ভাবে পরিচালনা করবার তাগিদে। একে অন্যকে বোঝানোর তাগিদে। একে অন্যকে পরিমাণগত তথ্য প্রদানের তাগিদে। একটি সংখ্যা দিয়ে মানুষকে বোঝানোর তাগিদে। যে সমস্ত একক নিয়ে আমরা বেশির ভাগ সময় মাথা ঘামাই, কথাবার্তা বলি, সেইগুলি হলো দৈর্ঘ্য, ভর এবং সময়। ঘটনা হলো দৈর্ঘ্য, ভরের একক নিয়ে যতো সময় মানুষ ইতিহাসকে দিয়েছেন, যতো আইন পাশ হয়েছে, তার থেকে হয়তো সময়ের এককের জন্যে মানুষ সময় অতিবাহিত করেছেন অনেক কম। আসলে এর কারণ ছিলো বাণিজ্যিক। চাষের জমির পরিমাপ, মানুষের বসবাসযোগ্য জমির পরিমাপ, জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের ওজন এবং তার পরিমাপ, এ সবই ছিলো মানুষের মূল চাহিদা। আর তা নিয়েই ছিলো সমাজের মাথা ব্যথা, মানুষের মাথা ধরা।
এই কয়েক শতাব্দী আগেও হয়তো সময়ের সূক্ষ্ম পরিমাপের কথা অত প্রয়োজন ছিলো না। এই সব নিয়ে পলাশ বরন পাল তাঁর মাপজোকের ইতিহাস বইতে বিস্তারিত লিখেছেন। কিন্তু এটা সত্যি শীতের দেশের মানুষের সময়ের দিকে একটু বেশিই নজর দিতে হয়েছিলো। কারণ সময়ের কাজ সময়ে না হলে, আর সেই সময়টা ফিরে আসত না। চাষের জন্যে সঠিক সময়ে বীজ না বোনা হলে সে বছরে আর ফসল জুটবে না। কিছু দেশে শীতকালে দিনের আলোর পরিমাণ থাকে খুবই কম। বছরের অধিকাংশ সময় আগে শীতের দেশের অনেক অংশই বরফে ঢেকে থাকতো তা সে জার্মানি হোক অথবা রাশিয়া। বছরে দুই-তিনবার ফসল ফলানোর মতন আবহাওয়া সেই সমস্ত দেশে ছিলো না, আজও নেই। শীতকালের ফসল, শীতকালের সবজি এই সব শব্দ ওখানে শোনা যায় না। আজকাল অবশ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সেই সব দেশেও চাষবাসের বেশ সুযোগ সুবিধা এসেছে। সেই সব দেশে কখন যে হঠাৎ করে আবহাওয়া মন্দ হয়ে যাবে, তা বোঝা এক বিরাট অসুবিধার বিষয় ছিলো। তাই অনুমান করা যায় সময়ের পরিমাপের প্রতি তাঁরা একটু বেশিই নিষ্ঠাবান ছিলেন। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ অঞ্চলের মানুষকে সময় নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করতে হয় নি। এর কারণ ছিলো আমাদের আবহাওয়া, এর কারণ ছিলো আমাদের জলবায়ু, ছিলো চাষের উপযুক্ত পরিবেশ, ছিলো প্রচুর পরিমাণে জলের যোগান ইত্যাদি, ইত্যাদি। আরেকটি একক আমরা ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে শুরু করেছি। যার যথেষ্ট প্রয়োগ শুরু হয়েছে সেই গত দুই শতাব্দী ধরে, সেটি হলো কারেন্টের বা বিদ্যুৎ প্রবাহের একক। এরই সাথে যে এককটি আমাদের জীবনে আজকে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন, সেটি হলো তাপমাত্রার একক। শীতপ্রধান দেশে এবং খুব গরমের দেশে আবহাওয়া দপ্তর তাপমাত্রার এককের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শীতের দেশের মানুষদের কাছে সকালে অফিস-কাছারিতে কর্মের উদ্দেশ্যে বেরোনোর তাগিদে ঘরের বাইরের তাপমাত্রা কতো থাকবে এই তথ্যটি জেনে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সেই তথ্যের উপরই নির্ভর করবে তাঁদের পোষাক-আষাক, নির্ভর করবে তাঁদের জুতো, সাথে পায়ের মোজা, নির্ভর করবে মাথায় টুপি, গলায় মাফলার, হাতমোজা, মোটা জ্যাকেট, অথবা পাতলা জ্যাকেট।
শিশু এবং বাচ্চাদের জন্যে তা আরো বিশেষ করে নজর দেওয়ার বিষয়। তাপমাত্রার উপযোগী সঠিক জামা-জুতো প্রয়োগ না করলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে চরম। একই কথা খাটে প্রবল গ্রীষ্মের ক্ষেত্রেও। এইসব হয়ত আর নতুন করে বলার কিছু নেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ স্থানে যেমন ইচ্ছা হলেই পায়ে একটি চপ্পল গলিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু প্রবল শীতের দেশে তা গুড়ে বালি। রোগ নির্ণয়ের তাগিদে শরীরের সঠিক তাপমাত্রা জানাও ডাক্তারদের বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা কতো হয়েছে তা শুধুমাত্র আর ডাক্তারদের জানার বিষয় নয়, প্রতিটি ঘরে ঘরেই আজ একটি প্রচলিত বিষয়। ফলত, খুঁজে দেখলে হয়ত প্রতিটি ঘরেই আজকাল তাপমাত্রা মাপক যন্ত্র, মানে থার্মোমিটারটি পাওয়া যাবে। শীতের দেশে যেমন জার্মানি, নরওয়ে, রাশিয়া অথবা মার্কিন প্রদেশের কিছু অঞ্চলে, যেখানে শীতকালে প্রবল শীতের প্রভাব, তাঁদের কাছে প্রতিদিনের জীবনে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র মানে থার্মোমিটার একটি অতীব প্রয়োজনীয় বস্তু। আজ ভারত তথা এশিয়াতেও এর বিশেষ প্রভাব, কারণ বাতানুকূল যন্ত্রটি চালু থাকলে ঘরের তাপমাত্রার সঠিক মানটি জেনে রাখা দরকার। দৈনন্দিন জীবনে যেমন রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক ওভেনের তাপমাত্রা কতো থাকবে, তা জেনে রাখা দরকার। তাতে যে কেকটি “বেক” (রান্না বা আঁচে শুকিয়ে শক্ত) করা হবে, তা কিন্তু একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রাতেই ভালো হবে। জীবনদায়ক ঔষধগুলোকে সঠিক তাপমাত্রায় বজায় না রেখে যদি বাইরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, ঔষধগুলো সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। এতে সমূহ বিপত্তিরও সম্ভাবনা থাকতে পারে। পদার্থবিদ্যার, রসায়নবিদ্যার, জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক অথবা প্রয়োগমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা পরিচালনা করবার জন্যে সঠিক তাপমাত্রার বিষয়টি জেনে রাখা একটি অপরিহার্য বিষয়। মোদ্দা কথা, এই রকম হাজারো জিনিস, যা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেখানে তাপমাত্রার সঠিক মাপটা জানা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এই সমস্ত আলোচনা আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার আগে, প্রথমেই এটা জানা দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে তাপমাত্রার মানেটা কী! উত্তর হলো, একটি পদার্থ কতোখানি শক্তি ধারণ করে আছে, তাপমাত্রা তার একটি মাপ, ঠিক যেমন ভাবে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতার এবং কারেন্টের একটি পরিমাপ আছে। যখন বাতাস উত্তপ্ত থাকে, তখন বায়ুর অণুগুলি দ্রুত-বেগে ছোটাছুটি করে। কোনো কিছু ছোটাছুটি করা মানেই তার গতিশক্তি তৈরি হয়, তাই তার গতিশক্তি অনেক বেশি থাকে। ঠিক অন্যদিকে বাতাস যতো শীতল হতে থাকে, তার সংশ্লিষ্ট অণুগুলিরও গতিশক্তি কমতে থাকে, একই সাথে শীতল হতে থাকে, অণুগুলির গতিবেগও অনেক হ্রাস পায়, অনুরূপভাবে তার শক্তিও কমে। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, তাপমাত্রা কোনো পদার্থের শক্তি চিহ্নিত করার একটি সহজ উপায়ও বটে তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই তাপমাত্রা মাপা হবে কী করে! তাপমাত্রা মাপা হয় বিভিন্ন স্কেলে। প্রতিদিনকার জীবনে প্রচলিত তাপমাত্রার স্কেল দুটি হলো সেলসিয়াস এবং ফারেনহাইট। ফারেনহাইট স্কেলটি চালু হয় সেই ১৭২৪ সালে, প্রায় ৩০০ বছর আগে। আর সেলসিয়াস স্কেলটি চালু হয় আনুমানিক তার প্রায় বছর কুড়ি পরে। প্রতিদিনকার জীবনে আমেরিকাতে এখনও প্রচলিত আছে ফারেনহাইট স্কেল, ঠিক তেমনই ইউরোপে প্রচলিত আছে সেলসিয়াস স্কেল। আমাদের দেশে ও এশিয়াতেও প্রচলিত সেই সেলসিয়াস স্কেল। কিন্তু জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্যে যে থার্মোমিটারটি ভারতে এখনও প্রচলিত আছে তা কিন্তু সেই ফারেনহাইট। এই বৈচিত্র্যের কারণ কি, তা একটি প্রশ্ন বটে। ভারতবর্ষে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সেইদিক থেকে ভেবে দেখলে এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা হয়তো নয়। সেটা মাথায় রেখেও এটা বলা যায়, একটি দেশে একই ধরণের জিনিস পরিমাপের একটি অভিন্ন একক থাকলেই সুবিধা, তাতে মানুষের হিসেব নিকেশের সুবিধা বৈ অসুবিধা হয় না। এই দুটি স্কেলই ঠিক করা হয়েছিলো জলের কিছু ভৌত ধর্মের উপর ভিত্তি করে। যে তাপমাত্রায় বরফ গলে জল হয়, এবং জল বাষ্পে পরিণত হয়, সেই দুটি মানকে নির্দিষ্ট একক হিসেবে ধরেই অন্য পদার্থের তাপমাত্রার হিসেব পাওয়া যায়। এটা সহজেই অনুমান করা যায় অন্যান্য পদার্থের ধর্ম আলাদা হবার কারণে, সেই সব পদার্থের বাষ্পীভূত হওয়ার, এবং ঘনীভূত হওয়ার তাপমাত্রাও আলাদা।
তাই সেই স্কেলের মান অনুযায়ী জল যে তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়, সেলসিয়াস স্কেল অনুযায়ী আমরা তাকে বলি শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠিক অন্যদিকে জল যে তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়, সেলসিয়াস স্কেল অনুযায়ী আমরা তাকে বলি একশো ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই এক থেকে একশো সীমাকে সমান ভাগে ভাগ করে নিলেই মধ্যবর্তী যেকোনো তাপমাত্রার মান পাওয়া যেতে পারে। ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট প্রাথমিকভাবে তাপমাত্রার পরিমাপ করেছিলেন মানুষের বগলের তাপমাত্রাকে একটি এবং আরো দুটি অন্য মানবিন্দুর তাপমাত্রার সহায়তায়। অন্যদিকে এন্ডারস সেলসিয়াস তাঁর যে প্রথম স্কেলটি চালু করেন তাতে তাপমাত্রা পরিমাপের দুটি মানবিন্দু আজকের নিরিখে ঠিক উল্টো ছিলো। অর্থাৎ, জল যে তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়, তা ছিলো ১০০ ডিগ্রি, এবং যে তাপমাত্রায় জল বাষ্পে পরিণত হয় তা ছিলো শূন্য ডিগ্রি। অর্থাৎ, তাপমাত্রা পরিমাপের ক্ষেত্রে এই স্কেলটি অনুযায়ী বেশি উষ্ণ মানে স্কেলের পরিমাপ কম এবং শীতল মানে স্কেলের পরিমাপ অনুসারে তাপমাত্রা বেশি। এই উল্টো স্কেলটি কিছুটা আশ্চর্যই ছিল বটে। পরবর্তীকালে এই উল্টো স্কেলকে অবশ্য সোজা করে দেওয়ার সংশোধনের কাজটি সম্পাদন করেন এক সুইডিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং ট্যাক্সোনমিস্ট কার্ল লিনাএউস। কিন্তু ঘটনা হলো এই সেলসিয়াস এবং ফারেনহাইট স্কেল দুটি যতোই প্রতিদিনকার জীবনে আমরা ব্যবহার করে থাকি, যতোই তা দৈনিক জীবনে কার্যকর হোক, তবুও একটি মূল সমস্যা থেকেই যায়। আর তা হলো, এই স্কেলগুলি এদের তাপমাত্রায় গ্যাস-অণুর শূন্য গতিবেগকে উপস্থাপিত করতে অক্ষম, মানে শক্তির শূন্যতার কৈফিয়ত দিতে তা অসমর্থ। তাই প্রাকৃতিক তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় কেলভিন নামক একটি স্কেলে। এখানে বোধ হয় এই কথা বলা প্রাসঙ্গিক হবে যে, তাপমাত্রার মানে ঋণাত্মক বা ধনাত্মক ধারণা এই দুই স্কেল মতে খানিকটা সাবজেক্টিভ, ফারেনহাইট স্কেল আর সেলসিয়াস স্কেলের নীচের মানকবিন্দু একই স্থান থেকে শুরু হচ্ছে না, তাপমাত্রার একটা স্কেল ও ব্যক্তি নিরপেক্ষ ধারণার প্রয়োজন আছে। পদার্থবিদদের কাছে মূলত কেলভিন স্কেলেরই প্রচলন বেশি।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এক ব্রিটিশ পদার্থবিদ প্রথম এই ধারণার প্রবর্তক ছিলেন যে কোনো কিছুই পরম-শূন্যের নিম্নে শীতল হওয়া অসম্ভব। আর বিশ্বব্যাপী পদার্থবিদরা কেলভিন স্কেলই ব্যবহার করে থাকেন। শূন্য কেলভিন মানে হলো সর্ব-নিম্ন তাপমাত্রা। এখানে বলে রাখা দরকার পরম-শূন্য তাপমাত্রা কিন্তু একটি তাত্ত্বিক ধারণা। অংকের ভাষায় আমরা হয়তো সহজেই শূন্য কেলভিন লিখে ফেলতে পারি। তবে পরীক্ষাগারে বাস্তবে সেই শূন্য কেলভিন তাপমাত্রাকে যন্ত্রের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া বা পৌঁছানো তা কিন্তু অসম্ভব। তাপগতিবিদ্যার তৃতীয়সূত্রেরধারণা থাকলে এই বিষয়টিকে বুঝতে আরো সুবিধাহয়। তাপগতিবিদ্যার তৃতীয়সূত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী কোনো একটি লেখায় আমরা করবো। আপাতত এই প্রসঙ্গ এখানেটানছি না। তবে সরলীকরণের মাধ্যমে এই ধারণাটি অন্তত দেওয়া যায়, পরম-শূন্য তাপমাত্রা এমন একটি তাপমাত্রা (শূন্য কেলভিন বা মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস), যেখানে পদার্থের সমস্ত অণু-পরমাণু অথবা কণা, যা দিয়ে সমস্ত কিছু গঠিত, সব স্থির হয়ে যায়। কোনো পদার্থের তাপমাত্রা অনেকটা অংশেই নির্ভর করে যেকোনো পদার্থ যা দিয়ে তৈরি, মানে অণু-পরমাণু, তার গতির উপর, কম্পনের উপর, তার স্পন্দনের উপর। তাই, কোনোভাবে যদি সেই অণু-পরমাণুগুলোকে স্থির করে দেওয়া যায়, তবেই সেই পদার্থের তাপমাত্রা শূন্য কেলভিনে নেমে যাবে, এবং যা কার্যত অসম্ভব। এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে এর থেকে নিম্ন তাপমাত্রাও বাস্তবিক নয়। কারণ কোনো গতিবেগ শূন্যের থেকে কম হওয়া যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনই পদার্থের শক্তি ধারণ কখনও শূন্যের কম হতে পারে না। তবে বলে রাখা ভালো, এখানে শক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে, যে শক্তিকে শুধুমাত্র অণুর থেকে নিয়ে নেওয়া যাবে। পরম-শূন্য তাপমাত্রা হলো শূন্য ডিগ্রি কেলভিন (মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা মাইনাস ৪৫৯.৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। ব্রিটিশ পদার্থবিদ লর্ড কেলভিন এই স্কেলের প্রবর্তন করেছিলেন ১৮৮০ সালের কাছাকাছি সময়ে। তাই তাঁর নামানুসারে এই স্কেলটি প্রচলিত হয় কেলভিন স্কেল বলে। এই স্কেল অনুযায়ী পরম-শূন্য তাপমাত্রা হলো শূন্য কেলভিন এবং জলের বরফে রূপান্তরিত হবার তাপমাত্রা হলো ২৭৩.১৫ কেলভিন। আমাদের অত্যন্ত আরামদায়ক ঘরের তাপমাত্রা হবে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আবার কেলভিন স্কেলে সেটাই হবে ৩০০ কেলভিনের কাছাকাছি। এই অংশটি শেষ করা যায় এটা লিখে যে পরম-শূন্য তাপমাত্রাতে পৌঁছানো বাস্তবে সম্ভব নয়। যা সম্ভব, তা হলো একটি সংগঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে পরম-শূন্য তাপমাত্রার খুব কাছাকাছি পৌঁছানো। সেই আলোচনা আমরা পরবর্তী লেখাগুলোতে ধাপে ধাপে করবো।
এই পরিকল্পিত নকশাতে দেখানো হয়েছে তাপমাত্রার তিনটি স্কেল যথাক্রমে কেলভিন, সেলসিয়াস এবং ফারেনহাইট। এবং তাদের পরিমাপের বিভিন্নতা। নিচের তালিকাতে নির্দেশিত আছে কয়েকটি পদার্থের,মূলত গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক।দশমিকের পরের সংখ্যাগুলি এই চিত্রের জটিলতা এড়ানোর জন্যে দেওয়া হয়নি।
এই ছকে দেখানো হয়েছে ভিন্ন তাপমাত্রায় বিভিন্ন গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক।
Comments